নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৪| ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপএ
আপনি যখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কোন একটি দেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যাওয়ার মননিমেষ করবেন। সর্বপ্রথম সেই দেশের ভৌগোলিক দিক পারিপার্শ্বিক শিক্ষাগত দিক সম্পর্কে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই দেশের ইতিহাস। সে দেশে কেন আপনি যাবেন এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাকে সর্বপ্রথম ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তাই চলুন নরওয়ে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা নেওয়া যাক-
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এর একটি দেশ হলো নরওয়ে। যা নিশীথ সূর্যের দেশ নামে পরিচিত। এই দেশটির রাজধানী হলো অসলো, এদেশের ভাষা হল নরওয়েজিয়ান , এবং মুদ্রার নরওয়েজিয়ান ক্রোনা ।ইউরোপের চারটি নর্ডডিক দেশের মধ্যে অন্যতম নরওয়ে বিশ্বের শান্তির সূচক হিসেবে রয়েছে এক নম্বরে। এই দেশে আপনার জীবন যাত্রার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও এই দেশ অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এবং এদেশে রয়েছে ভবিষ্যৎ গড়ার অপার সম্ভাবনা। এর অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে এই দেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষার দিক দিয়ে পুরো বিশ্বের কাছে এদের খ্যাতি রয়েছে।
নরওয়েতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য শিক্ষাগত নূন্যতম যোগ্যতা
আপনি যখন একটি দেশ থেকে ওপর একটি দেশের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে চাইবেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি যে দেশের নাগরিক সেই দেশ থেকে আপনার কিছু ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সে শিক্ষাগত ন্যূনতম যোগ্যতা গুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে আপনাকে ৬০% নাম্বার পেতে হবে।
ব্যাচেলর ডিগ্রী: আপনি যদি ব্যাচেলর ডিগ্রীর অর্জনের জন্য নরওয়েতে যেতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ থেকে এইচএসসি অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এবং এরপর ব্যাচেলর ডিগ্রীর জন্য দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছর অধ্যয়নরত হতে হবে।
মাস্টার্স ডিগ্রি: আপনি যদি দেশে আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রী কমপ্লিট করে থাকেন । তাহলে আপনি আপনার মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের জন্য নরওয়েতে যেতে পারেন। তবে আপনি আপনার মাস্টার্স ডিগ্রী যদি নরওয়ে থেকে করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশ থেকে আপনার ৩ বছরের ব্যাচেলার কোর্স কমপ্লিট থাকতে হবে।
পিএইচডি (phd)ডিগ্রি: আপনি যদি দেশে আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রী এবং মাস্টার্স ডিগ্রি কমপ্লিট করার পর সিদ্ধান্ত নেন পিএইচডি করার জন্য আপনি নরওয়েতে যাবেন সেক্ষেত্রে দেশ থেকে কমপক্ষে ২ বছরের মাস্টার্স কোর্স অবশ্যই কমপ্লিট করতে হবে।
নরওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংক্ষিপ্ত ধারণা
আপনি যখন আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রী অথবা মাস্টার্স ডিগ্রি অথবা পিএসডি এর জন্য নরওয়ে গিয়ে আপনার ডিগ্রী গুলো অর্জন করতে চান। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সর্বপ্রথম জানতে হবে নরওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে। এখানে আপনি পেয়ে যাবেন বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই দেশটিতে রয়েছে মোট ৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এবং এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে রয়েছে আরো ১৫০ টির মত কলেজ এছাড়াও রয়েছে ২টি পাবলিক আর্টস ইনস্টিটিউট। নিচে নরওয়ের কিছু সুনামধন্য ভার্সিটিগুলোর নাম দেওয়া হল-
1. University of Oslo;
2. Norwayegian University of science and technology;
3. University of bargen;
4. University of stavenger.
আপনি যদি নরওয়েতে পড়াশোনার জন্য যেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি একটি অনেক বড় সুবিধা হিসেবে পাচ্ছেন আপনি চাইলেও নরওয়েজিয়ান ভাষায় অথবা ইংরেজি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন একটি ভাষায় পড়াশোনা করতে পারেন। তবে আপনি যদি একজন বাঙালি হয়েও নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়াশোনা করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সে ভাষা সম্পর্কে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হবে।
IELTS স্কোর
আপনি বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যে কোন দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রী মাস্টার্স ডিগ্রী অথবা পিএইচডি যেকোনো ডিগ্রীর জন্য যেতে চান সর্বপ্রথম আপনার IELTS স্কোরের প্রয়োজন পড়বে। এই IELTS দ্বারা মূলত আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। IELTS স্কোর অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে IELTS পরীক্ষায় বসতে হবে।
এরপর আপনাকে এসকর্ট তুলতে হবে আপনি যেই দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার জন্য যেতে চান সেই দেশের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি IELTS স্কোর নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে। সে অনুযায়ী আপনাকে স্কোর তুলতে হবে। আপনি যদি নরওয়ের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে IELTS পরীক্ষার মাধ্যমে স্কোর তুলতে হবে কমপক্ষে 6.0। তবে আপনি safe zone এ থাকবেন।
আবেদনের সেশন
আপনি যখন নরওয়েতে পড়াশোনার জন্য আবেদন করতে যাবেন অবশ্যই আপনাকে সেখানে আবেদনের সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা রাখতে হবে। সাধারণত এই আবেদন অক্টোবর মাসের দিকে শুরু হয়ে ডিসেম্বর মাসের পূর্ব পর্যন্ত চলে থাকে। যদিও এটি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই আপনি নরওয়ের কোন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এডমিট হতে চাচ্ছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সেশন সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য নেওয়ার জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
সেমিস্টার ফি / টিউশন ফি
নরওয়েতে পড়াশোনার জন্য সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি এর প্রয়োজন পড়ে না। তবে আপনাকে সেমিস্টার ফি দিতে হবে । এই সেমিস্টার ফি নির্ধারণ হয়ে থাকে ৩০০ থেকে ৬০০ নরওজিয়ান ক্রোনা।
যা প্রতি সেমিস্টার পরপর আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। তবে কিছু প্রোগ্রাম অথবা কোর্সের ক্ষেত্রে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি নেওয়া হয় । এসব ক্ষেত্রে প্রতিবছর সেমিস্টারে ৫১ থেকে ১০১ মার্কিন ডলার ফি খরচ হতে পারে।
ক্রেডিট ট্রান্সফার
ক্রেডিট ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী রয়েছে তার নিম্নে আলোচনা করা হলো-
•অবশ্যই আপনি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তা গ্রেট বি (grade B) এর আওতায় থাকতে হবে;
•আপনি যদি সে বিশ্ববিদ্যালয় ৫০% এর অধিক কোর্স সম্পূর্ণ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট ট্রান্সফার আর সম্ভব হবে না;
•অবশ্যই আপনাকে আপনার কমপ্লিট করা সকল কোর্সের কাগজপত্র প্রমাণ সহ উপস্থাপন করতে হবে।
উত্তম কোর্স নির্বাচন
আপনি যেহেতু উচ্চ শিক্ষার জন্য আপনার দেশ ত্যাগ করে নরওয়েতে শিক্ষা অর্জনের জন্য যাবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার মাথায় রাখতে হবে কোন কোর্সটির মাধ্যমে আপনি আপনার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলে আপনার জন্য উত্তম হবে। আবার আপনি নরওয়েতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে চাচ্ছেন এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাবজেক্ট গুলো সবচেয়ে বেশি ভ্যালুয়েবল সেই দিকেও আপনার নজর রাখতে হবে। তাই আপনার কোর্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে সবদিক বিবেচনা করে নির্বাচন করা উচিত।
নরওয়েতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ইংরেজি কোর্স অফার করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনি আগে থেকে দেশের জব মার্কেট আর যদি নরওয়েতে থাকতে চান তাহলে সে দেশের জব মার্কেট বুঝে আপনার সাবজেক্টটি নির্বাচন করা সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সাবজেক্ট সমূহ
এডুকেশন অডিওলজি ,আরলি চাইল্ডহুড ,এডুকেশন লাইব্রেরী সাইন্স ,বায়োটেকনোলজি, অকুপেশনাল থেরাপি, প্রোগ্রাম ফুড সায়েন্স, স্পেসালিস্ট টিচার ,এডুকেশন ,ফার্মেসী ,ফিশারিজ ,ফিজিওথেরাপি, হিউম্যানিটিস, ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নালিজম, ল আর্ট এন্ড ডিজাইন ,এগ্রিকালচার সায়েন্স ,মেরিটাইম সাইন্স, মেডিকেল সাইন্স, ডেন্ট্রিস্ট, আর্থ্রোফেডিক , রেডিওলজি, ন্যাচারাল সায়েন্স , সোশ্যাল সায়েন্স ,আর্কিটেকচার ,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস স্টাডিজ,ম্যানেজমেন্ট,সায়েন্স সোশ্যাল, ওয়ার্কারপ্রোগ্রাম, নার্সিং, থিওলজি, ভেটেনারি, মেডিসিন, ম্যাথমেটিক্স, বিবিএ, এম বি এ ইত্যাদি,।
স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ
বর্তমানে নরওয়েতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কোন কোটা ভিত্তিক স্কলারশিপ নেই। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক ধরনের স্কলারশিপ। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচের জন্য থাকবে অর্থ বরাদ্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনি যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন অবশ্যই সে ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন রকমের কাগজপত্র এর প্রয়োজন পড়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে কাগজপত্রের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই আপনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট খুঁজে তথ্য উপাত্ত দেখে আবেদন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদনের জন্য যে ডকুমেন্টস গুলোর প্রয়োজন হয় নিম্নে তার লিস্ট গুলো দেওয়া হল-
- প্রথমে নির্দিষত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে- সেটা অনলাইন বা অফলাইন দুটোই হতে পারে। এটা পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল।
- সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট।
- IELTS সনদ।
- পাসপোর্টের কপি (পাসপোর্টে কমপক্ষে ১ বছর মেয়াদ থাকতে হবে)।
- মোটিভেশন লেটার (Motivation Letter)।
- রিকমেন্ডেশন লেটার (Recommendation Letter)।
- চাকুরীর অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে)।
প্রবাসী বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url