জেনে নিন– পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন?

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন? পরীক্ষায় পাস মার্ক ৩৩ হওয়ার কারণ কী, কিভাবেই বা নির্ধারিত হলো পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩, আর এর পেছনের ইতিহাস কি! একজন স্টুডেন্ট হয়ে এটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? হয়তো অনেকেই ভেবেছেন আবার হয়তোবা না।

জেনে নিন– পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন?

মূলত যাদের জানাশোনার আগ্রহ বেশি এবং যারা নতুনত্ব প্রশ্ন খুঁজে বেড়ান তাদের মাথায় স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নটি এসে থাকে। তাই জানার উদ্দেশ্যে সার্চ করে থাকেন–পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন, এর এক্স্যাক্ট কারণ কি! তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা এ ব্যাপারে জানাবো সমস্ত বৃত্তান্ত। 

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ কিন্তু কেন? 

সাধারণত আমাদের বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি কখনো কখনো স্নাতক স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতে ৩৩ নম্বর পাস নম্বর হিসেবে বিবেচিত হয়। মানে ১০০ শতাংশ নাম্বারের মধ্যে যদি আমি ৩৩ শতাংশ নম্বর প্রাপ্ত হয়ে থাকি সেক্ষেত্রে আমাকে উত্তীর্ণ বা কৃতকার্য হবার জন্য ঘোষণা দেওয়া হবে। 


পরীক্ষায় পাশ নম্বর ৩৩% হলো কেন, এ প্রশ্নটা বলতে পারেন অনেক সুন্দর এবং যুক্তিসঙ্গত। কেননা এমন অনেক সংখ্যা রয়েছে যেগুলো চাইলেই পাস নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা যেত, কিন্তু সেটা না করে শুধুমাত্র ৩৩ কেই কেন নির্ধারণ করা হলো! মূলত এর পেছনে রয়েছে একটি কাহিনী। যেটা অবগত হলে আপনি বুঝে উঠতে পারবেন কেন পাশ মার্ক ৩৩ করা হয়ছিলো।

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হওয়ার কারণ ও ইতিহাস 

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হওয়ার কারণ ও ইতিহাস

জানা যায়– বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তান নামক এ দেশগুলোতে পাস নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩, মানে এই প্রত্যেক জায়গায় পাস মার্ক একই। তাই এরকম ভিত্তি করে অনেকেই এটা মনে করেন– উপমহাদেশে পাশের মার্কস ৩৩ বিধায় এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের উত্তরাধিকার। 


কারণ ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা যখন ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন তখন উপমহাদেশ তাদের দখলে চলে যায়। অতঃপর ভারত জনগণ স্বাধীনতা ফিরে পেতে মোটামুটি ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের জন্ম দেয়। সিপাহী বিদ্রোহ দমন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে সরাসরি ভারত শাসনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ প্রধান। 


পরবর্তীতে মোটামুটি ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো উপমহাদেশে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু সেই সময় পাস নম্বর কত করা হবে এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন বোর্ড কতৃপক্ষ দ্বিধায় পড়ে যায় পাস মার্ক নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে। অতঃপর তারা পরামর্শের জন্য শরণাপন্ন হয়ে যান ব্রিটিশদের। জানা গিয়েছে ওই সময় ব্রিটিশদের অর্থাৎ বৃটেনে পাশ নম্বর ছিল ৬৫। অতএব ১০০ শতাংশ নাম্বার এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নাম্বার পেলে সেটা পাস মার্ক হিসেবে নির্ধারিত হবে। 


তো সে সময় ইংরেজ সমাজে সাধারণত একটা প্রচলিত ধারণা ছিল। তারা মনে করতেন বুদ্ধি ও দক্ষতায় উপমহাদেশের মানুষ ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক। মানে তারা নিজেদেরকে অনেক বেশি জ্ঞানী এবং শিক্ষিত মনে করতেন। তাদের ধারণা ছিল তারা বুদ্ধি ও দক্ষতায় সেরা উপমহাদেশের মানুষদের থেকে। 


এজন্য পরবর্তীতে বিবেচনা করে পাশ নম্বর অর্ধেক করা হয়। অতএব ৬৫ কে অর্ধেকে নিয়ে আসা হয়। যেটা সংখ্যায় হিসেব করলে দাঁড়ায় ৩২.৫ নম্বর। মূলত এই ধারাবাহিকতায় ১৮৫৮ সাল থেকে শুরু করে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত সেখানে ৫ নম্বর ৩২.৫ নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এই নাম্বারটা কিছুটা জটিল হওয়ার কারণে গণনার সুবিধার্থে পরবর্তীতে ৩৩ করা হয়, মানে তখন থেকেই ৩৩ নম্বর কে পাস মার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 


অতএব যদি আপনি এক কথায় পরীক্ষায় পাশ নম্বর ৩৩ হল কেন বা ৩৩ নম্বর পরীক্ষার পাশ নম্বর বিবেচনা হওয়ার কারণ কি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চান সে ক্ষেত্রে বলা যায়– ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ ক্রাইটেরিয়ন ব্রিটিশদের কাছ থেকে পুরোপুরি কপি করার কারণে পাশ নম্বর ৩৩ হয়েছে। আর ১৬০ বছর পরেও ঔপনিবেশিক শাসকদের নিয়মে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। 


এ কারণেই বলা হয়ে থাকে– কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো আমাদের মগজে রয়ে গেছে উপনিবেশ। যাইহোক, অনেকে আবার প্রশ্ন করেন বাংলাদেশে পাস মার্ক কত, মানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাস মার্ক হিসেবে ৩৩ নির্ধারণ করা হয়েছে নাকি ২৫ নাকি ২৮! 

বাংলাদেশে পরীক্ষায় পাস মার্ক কত?

বাংলাদেশে পরীক্ষায় পাস মার্ক কত?

বাংলাদেশের পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৩৩, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কখনো কখনো এটাও শোনা যায় পাস মার্ক ২৮ করা হয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু এটাই জানার জন্য কখনো কখনো বাংলাদেশের জনগণ এই প্রশ্নটি করেন এবং সঠিক উত্তর খোঁজাখুঁজি করেন। 


সত্যি বলতে বাংলাদেশে পাস মার্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮, মূলত পরীক্ষার খাতা দেখে সঠিক উত্তরপত্রের উপর ভিত্তি করে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের কে ২৮ মার্ক দেওয়ার মাধ্যমে পাশ করাতে পারবেন। অতঃপর ৫ নম্বর অর্থাৎ ২৮ থেকে ৩৩ নম্বরে পৌঁছাতে যে পাঁচ নম্বরের প্রয়োজন পড়ে সেটা থাকবে শিক্ষকের দায়িত্বে বা শিক্ষকের আন্ডারে। 


শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর খাতা পছন্দ করেন, সবকিছু মিলিয়ে পরীক্ষার্থীর খাতা বা জ্ঞানের পরিসীমা শিক্ষকের কাছে ভালো লাগে সেক্ষেত্রে তিনি এক্সট্রা ৫ মার্ক যুক্ত করবেন, এমনটাই নিয়ম প্রচলিত রয়েছে আমাদের দেশে। তবে সবশেষে গিয়ে বাংলাদেশের পরীক্ষাতেও পাস মার্ক সেই ৩৩, মানে আমরাও ভারত এবং পাকিস্তানের মতো এখনো পর্যন্ত ব্রিটিশদের সেই নিয়মে ৩৩ কে ৫ মার্ক হিসেবে বিবেচনায় ফেলছি। 

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ 

পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন এটার ইতিহাস আমরা জেনেছি। তবে আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন সেক্ষেত্রে আমি বলবো– সাধারণত শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে এই মার্ক নির্ধারিত হয়েছে। সাধারণত এটি একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা শিক্ষার্থীর প্রাথমিক দক্ষতা যাচাই এর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত। 


আমরা জানি বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং মানদণ্ড অনুযায়ী পাঁচ নম্বর নির্ধারণ করেন। আর ৩৩ শতাংশকে সাধারণত ন্যূনতম যোগ্যতা বা নিরাপত্তার স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে পরীক্ষায় পাশ নম্বর হচ্ছে ৩৩। 


✓ ৩৩ শতাংশ নম্বর এমন ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ের পরীক্ষা অংশগ্রহণ করছে সেটির মৌলিক ধারণা গুলি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা আছে কিনা সেটা বুঝে উঠতে পারে। বলতে পারেন এটা এমন একটা সীমা যার শিক্ষার্থীর প্রাথমিক যোগ্যতা বা জ্ঞান পরিমাপের একক।


✓ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্ধারণ করা হয় যে এটি একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পাস নম্বর হিসেবে রাখলে শিক্ষার্থীদের মেধা বা দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর যে অন্তটা কিছুটা হলেও পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ কারণেই ৩৩ নম্বর হচ্ছে পাস নম্বর হিসেবে বিবেচিত। 


✓ শিক্ষার্থীদের একটি ন্যূনতম মানদন্ড অর্জন করতে হবে যাতে তারা পরবর্তী স্তরের পড়াশোনা করতে সক্ষম হয়। আর ৩৩ শতাংশ অর্জন করা মানে একজন শিক্ষার্থী অন্তত প্রাথমিক ধারণা অর্জন করেছে এবং পরবর্তী শ্রেণীতে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত। যাতে করে এই সিদ্ধান্তটা নিতে পারা যায় এবং শিক্ষার্থীর তার পরীক্ষার মাধ্যমে এটা উপস্থাপন বা প্রমাণ করতে পারে যে সে পরবর্তী ক্লাসে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত এ কারণেই ৩৩ নম্বর কে পাস নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।


তবে বহু বছর ধরে ৩৩ কে পাস নম্বর হিসেবে ধরা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এই পাস নম্বর পরিবর্তিত হতে পারে যখন তখন। তাই এটি সবসময় তেত্রিশ শতাংশ থাকবে এমনটা নয়।  


লেখকের মন্তব্য: তো পাঠক বন্ধুরা, পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ হলো কেন? এ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর যেহেতু শিক্ষা মানুষের একমাত্র নিজস্ব সম্পদ হিসেবে বিবেচিত তাই অবশ্যই জ্ঞান লাভের চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। সবাইকে জানাই আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রবাসী বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url