জান্নাতের ৮ টি দরজার নাম কি কি?
জান্নাতের বর্ণনা
জান্নাত নেককার বান্দাদের চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের স্থান। যেখানে মৃত্যু নেই, রোগবালাই নেই, বার্ধক্য নেই। সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার স্থান জান্নাত. ইসলামী পরিভাষায়, আখেরাতের ঈমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে আবাসস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে জান্নাত বলা হয় ।
আমল অনুযায়ী কে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবের?
জান্নাতের আটটি দরজা আছে, প্রত্যেক মুমিন নিজ নিজ আমল অনুযায়ী সেই দরজা গুলো দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন ।এই আটটি দরজার নাম কোথাও একসঙ্গে পাওয়া না গেলেও কোরআন হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় দরজা গুলোর নাম পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন ,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবেন তাকে জান্নাতের দরজা গুলো থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দ, এটাই উত্তম। অতএব যে নামাজ আদায়কারী ,তাকে নামাজের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী , তাকে রাইয়্যান দরজা হতে ডাকা হবে।যে মুজাহিদ,তাকে মুজাহিদ দরজা থেকে ডাকা হবে ।যে সদকা প্রদানকারী, তাকে সদকার দরজা থেকে ডাকা হবে।
এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল , আপনার জন্য আমার মা-বাবা কোরবান হোক , সব দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, হ্যাঁ আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে। (বুখারি,হাদিস,১৮৯৭)
আল্লাহর গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় জান্নাতের যেসব নাম ব্যবহার করেছেন,সেখানে আটটি নাম পাওয়া যায় যেমন-
জান্নাতের ৮টি দরজার নাম ও বৈশিষ্ট্য
১.বাবুস আস-সালাহ
(নামাজের দরজা), যারা আন্তরিকভাবে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম করা হয়েছে বাবুস-সালাহ বা নামাজের দরজা ।
২. বাবুল জিহাদ
(জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে তার জীবনের সম্পদ দিয়ে জিহাদ করবে তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে বাবুল জিহাদ বা জিহাদের দরজা।
৩. বাবুর-রায়্যান
(রোজার দরজা), যারা মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা রাখবে তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ করা হয়েছে বাবুর রায়্যান।
৪. বাবুস-সদকা
(দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থ সম্পদ দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করবে তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুস সদকা।
৫. বাবুল আইমান
(কেউ কেউ এই দরজা কে বাবুস শাফাআতও বলেছেন। কেউ আবার বাবুল মুতাওয়াক্কিলিনও (তাওয়াকুলকারীদের দরজা) বলেছেন। কেয়ামতের দিন যারা নবীজির সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে । (মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস,৩৬৮)
৬. বাবুল কিজিমিনাল
গইজা ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগ দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এ দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে। (উমদাতুল কারি,১৬/২৫৪)
৭. বাবুর-রাদ্বিন
(সন্তুষ্টদের দরজা), এ দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবুল লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ও বলে। যারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ যাদের উপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে। (তিরমিজ, হাদিস ,৩৫৮১)
৮. বাবুত-তাওবা
(ক্ষমা পার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, তাদের সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। এটি তওবা কারীদের জন্য সবসময় খোলা থাকে। (জামিউস সগির, হাদিস,৭৩২০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবিজি (সা.) জান্নাতের বিভিন্ন দরজার উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একই ধরনের দুটি বস্তু ব্যয় করবে, তাকে জান্নাতের বিশেষ দরজা থেকে ডেকে বলা হবে, ‘হে আল্লাহর বান্দা, এটি তোমার জন্য কল্যাণকর।’ যে নিয়মিত নামাজ আদায় করে, তাকে বাবুস সালাত থেকে ডাকা হবে। যে জিহাদ করে, তাকে বাবুল জিহাদ থেকে ডাকা হবে। যে সদকা করে, তাকে বাবুস সদকা থেকে ডাকা হবে। যে রোজা পালন করে, তাকে বাবুর রাইয়ান থেকে ডাকা হবে। এই কথা শুনে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কসম! যদি একজনকে জান্নাতের দরজাগুলোর মধ্যে থেকে কোনো একটি দরজা দিয়ে ডাকা হয়, তার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এমন কেউ কি থাকবে, যাকে সবগুলো দরজা থেকে একসঙ্গে ডাকা হবে?’ আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘অবশ্যই, এমন কেউ থাকবে। এবং আমি আশা করি, তুমি তাদের একজন হবে!’’’ (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৭)।
আজানের জবাব ও দোয়ার ফজিলক হাদিসের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
আজান দেওয়ার মাধ্যমে মুসলি শম্প্রদায়ের সকল মানুষকে আল্লাহর হুকুম নামাজ আদায়ের নির্দশনা বাঝায়।
প্রবাসী বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url