আয়নাঘর কি? What is Aynaghar?

আয়নাঘর কি?

নেই জানালা নেই বাইরের পৃথিবীর সাথে কোনো যোগাযোগ।সারাক্ষণই ঘর ঘুরিয়ে চলা এক্সজাস্ট ফ্যানের আওয়াজে, যেখানে আসলে বাইরের কোনও শব্দ।তবে মাঝে মাঝে বিমান ওঠানামার কম্পনে কেঁপে কেঁপে ওঠে পুরো কক্ষ।ঘরের কোথাও নেই, এক টুকরো হয় না।কিন্তু এই কক্ষটি পরিচিত হয়ে উঠেছে আয়নাঘর নামে।বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর বা ডিজিএফআইয়ের কথিত এক গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর, নামের মতোই রহস্যময় বন্দিশালার কথা খুব সম্প্রতি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু এমন একটি বন্দিশালা গুঞ্জন উঠেছিল বহুদিন আগেই। 

আয়নাঘর কোথায় অবস্থিত?

২০২২ সালের ১৬ আগস্ট সুইডেন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের একটি অনুসন্ধানী হুইসেলব্লোয়ারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল আয়না ঘরের কথা। আয়না ঘরের দুই বন্দির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত কথিত আয়না ঘরে আটক করে রাখা হয় হাই ভ্যালু বন্দিদের।নেত্র নিউজের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, .২০১৬ সালের ২৯ মে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শেখ মহম্মদ সেলিম নামের এক প্রবাসীকে। যার ঠাঁই হয়েছিল আয়নাঘর নামের ওই বন্দিশালায়।নেত্র নিউজ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেলিম জানান, আয়না ঘরের নানা অভিজ্ঞতার কথা।সেলিম জানান, তাঁকে যে কক্ষে আটক করে রাখা হয়েছিল, সে ঘরের দেওয়ালে খোদাই করা অনেক লেখা তাকে হতবাক করে দিয়েছিল। সেখানে ছিল ভিন্ন ভিন্ন হাতে লেখা। কেউ লিখেছেন তাকে ডিজিএফআই ধরে নিয়েছে। আবার কেউ নিজের নম্বর লিখে জানিয়েছেন, তার পরিবারকে তার বন্দী হওয়ার খবরটা পৌঁছে দেওয়ার আকুতি।

আয়নাঘরে কাদের রাখা হতো? 

আয়না ঘরের আরেক বন্দি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান প্রথমবার গুমের শিকার হয়েছিলেন ২০১১সালের জুলাই।বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া হাসিনুর রহমান কে ২০১২সালে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৮সালের ৮ আগস্ট দ্বিতীয়বার আটক হওয়ার পর প্রায় ১৮ মাস নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।হাসিনুর রহমান জানান, আয়নাঘর খ্যাত ওই ভবনে রয়েছে দুটি অংশ। পুরনো অংশে আছে ১৬টি কক্ষ। আর নতুন নীতিতে দশটি। সেখানে প্রহরী হিসেবে যারা কাজ করেন তারা সামরিক ও বেসামরিক লোকজন।এ ছাড়া দুই সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নেত্র নিউজ জানায়, সেখানকার কয়েকটি সাউন্ড প্রুফ রুমের কথা যেখানে বন্দীদের নির্যাতন করা হয়।সেলিম এবং হাসিনুর রহমান উভয়েই জানান যে, তাদেরকে যেসব খাবার দেওয়া হত তার মান ছিল খুবই ভালো৷ দেওয়া হত মাম পানির বোতল।তাঁরা যে সব সেলে বন্দি ছিলেন, সে কক্ষগুলো সম্পর্কেও কাছাকাছি বর্ণনা দেন দুজন। যেমন রুমগুলোতে কোনও জানলা ছিল না, ছিল দুই অংশ সমেত একটি দরজা।প্রথমে ছিল লোহার শিকের দরজা। তারপর কাঠের দরজা যার মাঝামাঝি একটি ছিদ্র করা।সামরিক বাহিনীর দুই কর্মকর্তা আয়না ঘরের বন্দিদের একটি তালিকাও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল তাকে ডিজিএফআই অপহরণ করেছে। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সামরিক কর্মকর্তা মারুফ জামান এবং ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায় এক সময় আয়না ঘরে বন্দি ছিলেন বলে জানায় নেত্র নিউজ।আর খুব সম্প্রতি কথিত আছে না ঘর থেকে ছাড়া পেয়েছেন ব্যারিস্টার এবং জামায়াতে ইসলামির নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম। সাবেক সামরিক জেনারেল এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা।


আরো পড়ুন..


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রবাসী বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url